হাসিনাকে মানার প্রশ্নই ওঠে না: খালেদা

15/09/2013 19:36

নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ
হাসিনাকে না মানার ঘোষণা দিয়ে নির্দলীয়
সরকারের দাবি আবার জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘পাতানো’ নির্বাচনের
ষড়যন্ত্র’ করছে দাবি করে তা রুখতেও জনগণের
প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
খালেদা জিয়া আবারো বলেন, দলীয় সরকারের
অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ
নেবে না।
নির্দলীয় সরকারের আন্দোলনে জনসমর্থনের
লক্ষ্যে নরসিংদীর পর রোববার
রংপুরে জনসভা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
তুমুল বৃষ্টির মধ্যে জিলা স্কুল মাঠের এই
জনসভায় অংশগ্রহণকারীদের আন্দোলনের
প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
টানা ৪৩ মিনিটের বক্তব্যে বিরোধীদলীয়
নেতা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি,
আগামী নির্বাচন, সরকারের সমালোচনার
পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন নিয়েও
কথা বলেন।
১৭ বছর পর রংপুরে খালেদা জিয়ার প্রথম
জনসভা মঞ্চে উঠে জাতীয় পার্টির সাবেক দুই
সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার ও শাহ
সোলায়মান ফকির বিএনপিতে যোগ দেয়ার
ঘোষণা দেন।
২০০৭ সালে বিচারপতি কে এম হাসানকে প্রধান
উপদেষ্টা হিসেবে আওয়ামী লীগের না মানার
কথা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “ওই
সময়ে আপনি (শেখ হাসিনা) প্রধান
বিচারপতি কে এম হাসানকে মানেননি।
আপনি একজন দলীয় প্রধান। তাই
আপনাকে মানার প্রশ্নই উঠে না।”
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের
ফলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই
পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হবে এবং সংবিধান
অনুযায়ী তা হবে আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪
জানুয়ারির মধ্যে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ
হবে না দাবি করে নির্দলীয় সরকার
পদ্ধতি সংবিধানে পুনর্বহালের
দাবি জানিয়ে আসছে বিরোধী দল।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এজন্য সংবিধান
সংশোধনের দাবি নাকচ করে আসছে।
খালেদা জিয়া বলেন, নির্দলীয় সরকারের
অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নির্দলীয় সরকার
ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।
“এই দাবিতে আমরা আন্দোলনে নামব,”
ঘোষণা দিয়ে সমবেত জনতার
উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা কি আমার
সঙ্গে নামবেন?”
জনসভার নেতা-
কর্মী সমর্থকরা হাত তুলে ‘হ্যাঁ’
বললে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “ইনশাল্লাহ
রাজপথে আপনাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হবে।”
“২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের সময় আছে।
সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল এনে পাস করুন।
তাহলে সকলের অংশগ্রহণে দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন হবে।”
সরকারের আলোচনার প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায়
খালেদা বলেন, “নির্দলীয় সরকারের প্রধান
কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
তবে নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানা পর্যন্ত
কোনো আলোচনা হতে পারে না। আমরা ২৪
অক্টোবর পর্যন্ত দেখব- সরকার কী করছে।”
আওয়ামী লীগ ‘পাতানো’ নির্বাচনের ‘ষড়যন্ত্র’
করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “সরকার
জনগণকে ভয় পায় বলে নির্দলীয় সরকারের
অধীনে নির্বাচন দিতে চায় না। তারা নিশ্চিত
জানে যে, ক্ষমতায় না থাকলে তাদের
ভরাডুবি হবে।”
প্রশাসন ও পুলিশের
উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন,
“আপনারা সরকারের অন্যায় কাজে ব্যবহার হবেন
না। আপনারা কোনো ব্যক্তি বা দলের
পক্ষে কাজ করবেন না। এই সরকারের বয়স মাত্র
তিনমাস। এরপর তারা বিদায় নেবে।”
বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সরকারের
‘আজ্ঞাবহ ও মেরুদণ্ডহীন’ আখ্যায়িত
করে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে বলব,
আপনারা একদলীয় নির্বাচন করতে পারেন না।
এখনো সময় আছে, আপনারা মেরুদণ্ড
সোজা করে দাঁড়ান। জনগণ আপনাদের সমর্থন
জানাবে।”
জনসভার শুরুতে বৃষ্টি না থাকলেও খালেদার
বক্তৃতার শুরু হলে বৃষ্টি নামে এবং তার
মাত্রা বাড়তে থাকে। জনসভায় কর্মী-
সমর্থকরা ভিজে ভিজেই বিএনপি চেয়ারপারসনের
বক্তব্য শুনতে হয়।
খালেদা বলেন, “এই বৃষ্টি আল্লাহর রহমত।
রংপুরের মানুষ জেগেছে।”
রংপুরে চারদলীয় জোট সরকার আমলের বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত
আওয়ামী লীগ বাতিল
করেছে দাবি করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন,
তারা পুনরায় ক্ষমতায় গেলে ওই সিদ্ধান্ত
বাস্তবায়ন করবেন।
“তবে আপনারা আমরা একটা দাবি পূরণ করবেন,
তা হচ্ছে- নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আমার
সঙ্গে আন্দোলনে নামবেন।”
১৮ দলীয় জোটের এই জনসভায় বিএনপি ছাড়াও
জামায়াতে ইসলামীসহ জোট শরিক দলগুলোর
নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যে খালেদা জিয়া বৃহত্তর রংপুরের
নীলফামারীর বাসিন্দা ইসলামী ছাত্র শিবিরের
কেন্দ্রীয় সভাপতির ওপর কারানির্যাতনের
নিন্দা জানিয়ে সব রাজবন্দির
মুক্তি দাবি করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন জনসভাস্থলে আসার পর
স্থানীয় শিশুশিল্পীরা গান গেয়ে তাকে বরণ করে।
এর আগে কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন
ভাওয়াইয়া গান গেয়ে শোনান। পরে জনসভায়
বক্তৃতাও দেন তিনি।
জনসভায় রংপুর মহানগর
এবং আটটি উপজেলা ছাড়াও বিভাগের ৭
জেলা থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী যোগ
দেয়। খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুরুর আগে বিকাল
৩টায়ই জনসভাস্থল কানায় কানায় ভরে যায়।
এরপর জনসভার বিস্তৃতি ছড়িয়ে পড়ে মাঠের
পশ্চিমে মেডিকেল কলেজ মোড়, সেনানিবাস
চেক পোস্ট, দক্ষিণে রেজিস্ট্রী অফিস, জজ
কোর্ট, উত্তরে রাধাবল্লভ ও
হনুমানতলা মোড় এবং পূর্বে জাহাজ
কোম্পানি মোড় পর্যন্ত।
বিভিন্ন স্থান
থেকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর
মিছিল ঢুকতে থাকলে বেলা ১২টার পর
থেকে নগরীতে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত
হয়।
জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-
কর্মীরাও মিছিল নিয়ে জনসভায় যেগ দেন।
যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত দলের শীর্ষনেতাদের মুক্তির
দাবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন ছিল তাদের
হাতে।
জনসভায় বিএনপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার
মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান,
জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, এ জেড
এম জাহিদ হোসেন, আসাদুল হাবিব দুলু, সৈয়দ
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন
নবী খান সোহেল, শিরিন সুলতানা, সুলতান
সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল,
হাবিবুর রশীদ হাবিব।
আবদুল মঈন খান, সাদেক হোসেন খোকা,
শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান,
বরকত উল্লাহ বুলু জনসভা মঞ্চে ছিলেন।
১৮ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন
অলি আহমদ, আন্দালিব রহমান পার্থ, মুহাম্মদ
ইসহাক, আবদুল লতিফ নেজামী, এম শামসুল
ইসলাম, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, শফিউল
আলম প্রধান, জেবেল রহমান গানি, খন্দকার
গোলাম মূর্তজা।
জেলা বিএনপি আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেনের
সভাপতিত্বে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য
রাখেন শামসুজ্জামান শামু, মমতাজ শিরিন
ভরসা, সাইফুল ইসলাম, পরিতোষ চক্রবর্তী, নুর
মোহাম্মদ দন্ডল, ফরহাদ হোসেন আজাদ,
এমদাদুল হক ভরসা, জাহাঙ্গীর আলম খান, আবু
তাহের, রইস আহমেদ, আবদুস সালাম, জহির
আলম নয়ন।
রংপুরের জনসভার পর বগুড়ার উদ্দেশে রওনা হন
খালেদা জিয়া। সেখানে রাত কাটিতে সোমবার
রাজশাহীতে জনসভা করবেন তিনি।
ঢাকা থেকে শনিবার রওনা হয়ে রাতে বগুড়ায় রাত
কাটান বিএনপি চেয়ারপারসন। সেখান
থেকে রোববার দুপুরের পর তিনি রংপুর সার্কিট
হাউজে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান বিএনপির
স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান,
সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুদু,
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন
নবী খান সোহেল, রংপুর জেলা বিএনপির
আহবায়ক মোজাফফর হোসেন।
বগুড়া থেকে রংপুর ১০০ কিলোমিটার সড়কের
বিভিন্ন অংশে হাজার হাজার নেতা-
কর্মী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়ার
গাড়িবহরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানায়।
বিরোধী দলীয় নেতাকে স্বাগত জানিয়ে এই
পথে নির্মাণ করা হয় শতাধিক তোরণ।
আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের
ছবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডও
দেখা যায় এই পথের বিভিন্ন অংশে।