জয়'যাত্রার জনস্রোতে নৌকা ভাসানোর ডাক

15/09/2013 19:39

বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার
প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকায় ভোট চেয়েছেন সজীব
ওয়াজেদ জয়।
রোববার প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের
হয়ে নির্বাচনী প্রচারে ময়মনসিংহ সফরের
পথে গাজীপুর ও ময়মনসিংহে তিনটি পথসভা ও
একটি কর্মীসভায় জয় বর্তমান সরকার ও বিগত
সরকারের তুলনা তুলে ধরে মানুষকে নৌকায়
ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি চান।
ময়মনসিংহ শহরে এক
কর্মী সমাবেশে তিনি বলেন,
“আমরা জাতিকে একটা ওয়াদা দিয়েছিলাম,
একটা ভিশন দিয়েছিলাম। সেটা বাস্তবায়ন
করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।”
একই সমাবেশসহ অন্যান্য
সমাবেশগুলিতে বিএনপির-জামায়াত জোট
সরকারের শাসনামলের ‘জঙ্গিবাদ ও বোমা’
হামলার কথা মানুষকে স্মরণ
করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীপুত্র দলীয়
নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান
জানান।
প্রতিটি পথসভা ও কর্মীসভায় জয় গত সাড়ে চার
বছরে বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ, শিক্ষা,
স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা খাতে ‘উন্নতি’
এবং ‘দুর্নীতি কমানো’ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের
সূচক তুলে ধরেন।
প্রতিটি সভাতেই তিনি সমবেত
মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, মধ্যম আয়ের
দেশে পরিণত হতে অর্ধেক পথ
এগিয়েছে বাংলাদেশ। বাকি অর্ধেক পথের জন্য
আবারো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
মুক্তাগাছা পৌর শহরে আরকে উচ্চ বিদ্যালয়
মাঠে পথসভায় তিনি বলেন, “জোট সরকারের
সময় এক মেগাওয়াটও বিদ্যুৎ উত্পাদন বাড়েনি।
আমরা সেটা দ্বিগুণ করেছি। সাড়ে চার বছর
আগে মানুষের মাথাপিছু গড় আয় বছরে ৪০ হাজার
টাকা ছিল। এখন সেটা ৮০ হাজার টাকার উপরে।
“আগে এদেশে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৫ বছর।
এখন সেটা ৭০ এ পৌঁছেছে। তার মানে মানুষ
ভালো আছে, সুস্থ্য আছে। আগে মানুষ মঙ্গায়
মারা যেতো। গত সাড়ে ৪ বছরে একটা লোকও
মঙ্গায় মারা যায়নি।”
জয় বলেন, গত সাড়ে চার বছরে ১৪ হাজার
স্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়েছে, সাড়ে চার হাজার
ইউনিয়নে তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
মোটা চালের দাম ৪২ টাকা থেকে ২৮ টাকায়
নামিয়ে আনা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ
গঠনে অগ্রগতির ফলে মোবাইলে পরীক্ষার
ফলাফল জানা যাচ্ছে এবং টাকাও
পাঠানো যাচ্ছে।
“আওয়ামী লীগের সময় গত সাড়ে চার
বছরে দেশে একটিও বোমা হামলার ঘটনা ঘটেনি।
আমরা সন্ত্রাস নির্মূল করেছি।
আপনারা শান্তিতে বসবাস করতে পারছেন।”
ময়মনসিংহ যাওয়ার
পথে গাজীপুর চৌরাস্তায় চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয়
ও কলেজ মাঠে পথসভায় জয় বলেন, “একাত্তরের
অসমাপ্ত বিপ্লব সমাপ্ত করতে যাচ্ছি আমরা।
আরো অর্ধেক পথ বাকি।
এটা করতে আওয়ামী লীগকেই ফের ক্ষমতায়
আসতে হবে।”
মুক্তাগাছায় জয় বলেন,
“যদি বিএনপি ফিরে আসে তাহলে জঙ্গিরা আবার
ফিরে আসবে। তারা লাইন ধরে অপেক্ষা করছে।
তারা ফিরে এসে আবার বোমা হামলা করবে।
“বিএনপি যদি ক্ষমতায়
আসে তাহলে আমরা যে ১৪ হাজার স্বাস্থ্য
কেন্দ্র কেরেছি তা বন্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যেক
ইউনিয়নের যে সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন তথ্য
কেন্দ্র করেছি তা বন্ধ হয়ে যাবে।
আমরা যে বিদ্যুৎ উত্পাদন দ্বিগুণ করেছি তাও
বন্ধ হয়ে যাবে।“
পোশাক শিল্প শ্রমিক অধ্যুষিত গাজীপুরের
চান্দনা ও টঙ্গীর পথসভায় জয় বলেন,
“বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হবে।
বিদ্যুতের অভাবে কারখানা বন্ধ হবে, স্কুলের
শিক্ষর্থীরা বই পাবে না।”
বিএনপির সময় বোমা হামলার কথা স্মরণ
করিয়ে দিয়ে জয় বলেন, “তখন ২১ অগাস্ট
গ্রেনেড হামলা হয়েছে, আইভি রহমান, আহসান
উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছে।
সারাদেশে বোমা হামলা হয়েছ। এসবই হয়েছিল
হাওয়া ভবনের পরিকল্পনায়।”
আবার ক্ষমতায় এলে কী করবে তার
রূপরেখা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর নাতি বলেন,
“আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে মাথাপিছু
আয় দ্বিগুণ হবে। দারিদ্র্য দূর হবে,
ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেওয়া হবে।
দূর্নীতি নির্মূল করা হবে।”
গাজীপুরে পথসভায় তিনি শ্রমিকদের বেতন
বাড়ানো, সেখানে পোশাক শিল্পের মতোই
ইলেকট্রনিক পণ্যের কারখানা স্থাপন
এবং স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য
ঘরবাড়ি নির্মাণ ও গৃহঋণের প্রতিশ্রুতি দেন।
জয়ের দাবি, “একমাত্র আওয়ামী লীগই
পারে এদেশের উন্নয়ন করতে।”
আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার জন্য
তিনটি পথসভাতেই মানুষকে ‘ওয়াদা’ করান তিনি।
সন্ধ্যায়
মুক্তগাছা শহরে কর্মী সম্মেলনে তিনি দলের সব
কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান
জানান এবং উন্নয়নের কথা মানুষের
কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।
“আপনাদের কাজ করতে হবে। ভোট চাইতে হবে।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে উন্নয়নের কথাগুলো বলতে হবে।
বিএনপির সময় দেশ কোথায় ছিল আর এখন
কোথায়
আছে তা মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে।”
জয় বলেন, “আপনারা একটা পরিবারের মতো।
আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ
করলে আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না।”
জয়ের যাত্রা
রোববার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে বিশেষ
নিরাপত্তায় গণভবন থেকে রওয়ানা হন তিনি।
নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাংবাদিকরা তার
সঙ্গে আছেন।
দুই দিনের
সফরে গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের
বিভিন্ন এলাকায় পথসভা ও কর্মীসভা করার
কথা তার।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ
বৃদ্ধি এবং ভোটের আগে তাদের চাঙ্গা করতেই
এই সফর বলে আয়োজকরা জানান।
সকালে জয়ের গাড়িবহর উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর
পার হওয়ার সময় সড়কের দুই পাশে বিপুল
সংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থককে ব্যানার ও
প্ল্যাকার্ড
হাতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীপুত্রকে স্বাগত
জানিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
টঙ্গীর টেসিস কলোনি মাঠে ও
চান্দনা স্কুলে দুটি পথসভা করে ১১টা ২০
মিনিটে ময়মনসিংহের উদ্দ্যেশ্যে রওনা হন জয়।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায়
জয়ের আগমনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অসংখ্য
তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
পথের দুপাশে ছিল বর্নিল ব্যানার-পোস্টার।
মহাসড়কের বিভিন্ন বাজারে হাজার হাজার মানুষ
রোস্তার দুপোশে অসংখ্য কর্মী-সমর্থক
শ্লোগান দিয়ে জয়কে শুভেচ্ছা জানায়।
পৌনে তিনটার দিকে ময়মনসিংহ সার্কিট
হাউজে পৌঁছে দুপুরের খাবার খান জয়। বিভিন্ন
জায়গা থেকে মোটর শোভাযাত্রা ও মিছিল
নিয়ে হাজার হাজার মানুষ এসে ভীড় জমান
সার্কিট হাউজে।
বিকেল সোয়া চারটার দিকে সার্কিট হাউজ
থেকে মুক্তাগাছা পৌর শহরে আর
কে উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে এক পথসভায় যোগ
দিতে রওনা হন জয়। সেখান থেকে ফিরে বিকেল
সাড়ে পাঁচটার দিকে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ
সংলগ্ন জিমনেসিয়ামে কর্মীসভায় অংশ নেন
তিনি।